জন্ডিস মূলত কোন রোগ না আসোলে এটি রোগের লক্ষন মাএ। বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে জন্ডিস এর। জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে কি এবং জন্ডিস হলে করনীয় এই সম্পূর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করবো। জন্ডিস বলতে সাধারণত লিভারের প্রদাহজনিত জন্ডিসকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
আমাদের লিভারে প্রদাহ হতে পারে ভাইরাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ওষুধ, অ্যালকোহল আরো নানা কারণে। সাধারনত হেপাটাইটিস – ই, এ এবং বি ভাইরাসের জন্য আমাদের লিভার প্রদাহের প্রধান কারন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। প্রথম দুটি পানি ও খাদ্যবাহিত আর তৃতীয়টি ছড়ায় মূলত রক্তের মাধ্যমে।
হেপাটাইটিস এ ভাইরাস প্রধানত শিশুদের জন্ডিসের কারণ, কিন্তু যেকোনো বয়সের মানুষে এর হেপাটাইটিস ই ও বি ভাইরাস এ আক্রান্ত হতে পারে।
জন্ডিস নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাঈদা রহিম বলেন, প্রস্রাবের রং, চোখ ও ত্বক হলদে দেখালে জন্ডিস হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
তাছাড়া আরো অনেক ধরনের কারন থাকতে পারে জন্ডিস এর। আমাদের দেশে জন্ডিসের রোগীরা খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে খুবই বিভ্রান্তিতে থাকে সব সময় কি খাবে কি খাবে না এইসব নিয়ে।
Table of Contents
Toggleজন্ডিস হলে করনীয়?
সব সময় চেষ্টা করতে হবে বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানি খাওয়ার। যদি আপনার কখনো শরীরে রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয় অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে যাতে কোন ধরনের সম্যসা না হয়। সব সময় ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করাটাও খুবই জরুরি। হেপাটাইটিস বি-এর টিকার জন্য আমরা খুব একটা গুরুত্ব দেই না এই টিকাটা আমাদের সবারই দেওয়া উচিৎ।
চিকিৎসা
এর আগেও আমরা আলোচনা করেছি জন্ডিস কোন রোগ নয় সেক্ষেত্রে জন্ডিস রোগের কোন নির্দিষ্ট কোন ওষুধ নেই।কিন্তু সব থেকে ২০ দিনের মধ্যে যদি রক্তেবিলিরুবিনের এর পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায় তাহলে জন্ডিস এমনিতেই কমে যায়। যদি আপনার জন্ডিস হয়ে থাকে তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।
এ সময়ে যেকোনো ধরনের ব্যথার ওষুধ যেমনঃ প্যারাসিটামল ঘুমের ওষুধ ও অপ্রয়োজনীয় বা কবিরাজি ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। যদি কোন ধরনের ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে।
যে যে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে
জন্ডিসের রোগীকে সম্পূর্ণভাবে বাইরের খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে। সবথেকে বেশি সতর্ক থাকতে হবে পানি খাওয়ার বিষয়। জন্ডিস থাক বা না থাক পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে সব সময় সবার সচেতন হওয়া উচিত।
যদি পানি নিরাপদ মনে না হয় অবশ্যই ভালোমতো ফুটিয়ে তারপর খেতে হবে যাতে করে পানির মাধ্যমে কোন ধরনের রোগ তাদের দেহে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেরই বাইরের খাবার যেমন ফুচকা, চটপটি ,বোরহানি , সিঙ্গারা, এই সমস্ত জিনিস প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে।
বাইরের জিনিস এমনিতেই খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর মধ্যে যদি জন্ডিস হয়ে থাকে তাহলে তো কোনোভাবেই এটি খাওয়া যাবে না। গর্ভবতী মহিলাদের আরো বিশেষভাবে সাবধান থাকা উচিত। গর্ভবতী অবস্থায় যদি কারো হেপাটাইটিস কি হয় শেষ তিন মাসে তাহলে সে ক্ষেত্রে মা ও শিশু উভয়েরই মৃত্যুর আশঙ্কা শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়
কি ধরনের খাবার খেতে হবে
খাবারের ওপর তেমন কোন বাধা নিষেধ নেই বললেই চলে কিন্তু কিছু খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। যেমন বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার (ঘি,মাখন,খাসির মাংস, গরুর মাংস, বাইরের ফাস্টফুড, ইত্যাদি। জন্ডিস রোগীদের ক্যালরির প্রয়োজন হয় এবং হজমে সাহায্য করে এরকম সহজলভ্য খাবার খেতে হবে যেমনঃ ভাত, সুজি, রুটি, জাউ ভাত ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে।
কেমন পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে
এ সময় ভারী কোন কাজ বা অনেক বেশি পরিশ্রমের কাজ না করাটাই ভালো। কারণ, ভাইরাল হেপাটাইটিস লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে জন্ডিসের পরিমাণ আরো অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে এবং জটিলাকার ধারণ করতে পারে।
জন্ডিসের কিছু ভুল ধারণা
আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করে জন্ডিস হলে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। কিন্তু বেশি বেশি খেতে হবে আখের রস, ডাবের পানি ,গ্লুকোজ ,শরবত ইত্যাদ। তার মানে এটা নয় যে পানি কম খেতে হবে একজন সাধারন মানুষের মতই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে কিন্তু স্বাভাবিকের তুলনায় যদি কোম্পানি পান করেন তাহলে সমস্যা হতে পারে।
নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয়
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও জন্মের পর শতকরা ৭০ – ৮০ ভাগ নবজাতকের জন্ডিস হতে পারে। এজন্য জন্ডিস আক্রান্ত শিশুর প্রায় ৫০ শতাংশের বেলায় একে বলে স্বাভাবিক জন্ডিস। শিশুর যকৃৎ সম্পূর্ণ কর্মক্ষম হয়ে উঠতে একটু দেরি হলে ও রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জন্ডিস হতে পারে।
কিন্তু এই সময়ে কোনো ভাবেই নবজাতককে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত রাখা যাবে না। সাধারণত স্বাভাবিক জন্ডিস ৭ দিনের মধ্যেই সেরে ওঠে। তাও যদি না কমে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
আশাকরছি উপরের আলোচনা আপনাদের উপকারে আসবে। যদি এই বিষয় নিয়ে আরো কোন প্রশ্ন আপনাদের থাকে তাহলে তা নিচে কমেন্ট এর মাধ্যমে জানান।
আরো পড়ুনঃ ধূমপান ছাড়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য